১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ঠান্ডা দিনের সাক্ষী থাকল কলকাতা। শুধু ভোর বা রাত নয়, সোমবার দিনের বেলাতেও হাড় কাঁপানো ঠান্ডা অনুভব করেছেন শহরবাসী। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে আসে ১৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় প্রায় সাত ডিগ্রি কম।
আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বরের পর এই প্রথম আলিপুরে দিনের তাপমাত্রা এতটা নিচে নামল। সে দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৫ ডিগ্রি, যা সময়ের হিসেবে স্বাভাবিক হলেও দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান পাঁচ ডিগ্রিরও কম থাকায় সারাদিন জুড়েই ঠান্ডার দাপট বজায় ছিল।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ২১ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির আশপাশে থাকার সম্ভাবনা। তবে তাতেও শীতের বড়সড় স্বস্তি মিলবে না, কারণ পারদ এখনও স্বাভাবিকের তুলনায় নিচেই থাকবে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, সোমবার দিনের বেলায় এতটা ঠান্ডা অনুভূত হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল নিম্ন বায়ুমণ্ডলে কুয়াশা ও অতিরিক্ত আর্দ্রতার আধিক্য। এর জেরে নিচু স্তরে মেঘ তৈরি হয় এবং দীর্ঘ সময় সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে দিনের তাপ কার্যত অনুভূত হয়নি।
আলিপুর আবহাওয়া কেন্দ্রের প্রধান এইচ. আর. বিশ্বাস জানান, উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসা আর্দ্র বাতাস বঙ্গোপসাগর হয়ে বাংলাদেশের উপর দিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করছে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরে আর্দ্রতা বেড়েছে এবং কুয়াশা ও মেঘের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর-পশ্চিম ভারতের ঠান্ডা বাতাস ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি সক্রিয় থাকায় রাতের তাপমাত্রাও কিছুটা কমেছে।
সোমবার শহরে সর্বনিম্ন আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৭১ শতাংশ, যেখানে সাধারণত শুষ্ক উত্তর-পশ্চিমি হাওয়ার দাপটে এই আর্দ্রতা ৪৫ শতাংশের নীচে নেমে যায়।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মঙ্গলবার কলকাতার আকাশ মূলত পরিষ্কার থাকবে, তবে ভোরের দিকে কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা দেখা যেতে পারে। দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে আপাতত শুষ্ক আবহাওয়া বজায় থাকবে। হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশার সতর্কতা জারি করা হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলায়। কোথাও কোথাও দৃশ্যমানতা কমে ২০০ মিটার পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।
উত্তরবঙ্গে কুয়াশা নিয়ে বিশেষ সতর্কতা দিয়েছে হাওয়া অফিস। দার্জিলিং, কোচবিহার ও উত্তর দিনাজপুরে মঙ্গলবার ঘন কুয়াশার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সব এলাকায় দৃশ্যমানতা ৫০ মিটার পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। কোচবিহারের কিছু অংশে বিকেলের দিকে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি দৃশ্যমানতার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
এছাড়া বুধবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে দার্জিলিংয়ে হালকা বৃষ্টি ও তুষারপাতের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। সব মিলিয়ে, আপাতত শীতের দাপট পুরোপুরি কমতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলেই ইঙ্গিত হাওয়া অফিসের।
- Log in to post comments