সাম্প্রতিক সময়ে সোনা ও রুপোর বাজারদর নজিরবিহীন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিশেষ করে সোনার পাশাপাশি রুপোর দামও এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক অস্থিরতা, বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতির চাপ এবং ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ চাহিদাই এই মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ।
২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত সোনার তুলনায় রুপোর দর বৃদ্ধির হার বেশি। চলতি বছরে সোনার দাম প্রায় ৬৩ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে রুপোর মূল্য বৃদ্ধি ১১৮ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই সময়কালে শেয়ার বাজারের তুলনায় রুপো বিনিয়োগকারীদের বেশি রিটার্ন দিয়েছে।
ভারতীয়দের কাছে ঐতিহ্যগতভাবে সোনা ও রুপো দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপদ সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। তবে চলতি বছরের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সংসদে প্রশ্ন উঠেছে সরকার কি এই দুই মূল্যবান ধাতুর দাম নিয়ন্ত্রণে কোনও পদক্ষেপ নিতে চলেছে?
লোকসভায় ডিএমকে সাংসদ থিরু অরুণ নেহেরু ও সুধা আর সরকারের কাছে জানতে চান, শুল্ক কমানো, কর কাঠামো পরিবর্তন বা উৎসব ও বিবাহের মরসুমে সাধারণ পরিবারের আর্থিক চাপ কমাতে খুচরো মূল্য নিয়ন্ত্রণের কোনও পরিকল্পনা রয়েছে কি না।
এই প্রশ্নের উত্তরে অর্থ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের বাজারে সোনা ও রুপোর দাম মূলত আন্তর্জাতিক বাজারদর, রুপি-ডলারের বিনিময় হার এবং কর ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির বাড়তি হারে সোনা মজুদের প্রবণতাই বড় কারণ।
অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী সংসদে জানান, সরকার সরাসরি সোনা বা রুপোর দাম নির্ধারণ করে না—দাম ঠিক হয় বাজারের চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে। তবে কর নীতির মাধ্যমে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া সম্ভব। সেই লক্ষ্যেই ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে সোনা আমদানির উপর শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে আমদানির খরচ কমেছে এবং চোরাচালানের প্রবণতাও হ্রাস পেয়েছে বলে সরকারের দাবি।
এছাড়াও, সোনার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে গোল্ড মনিটাইজেশন স্কিম (GMS), গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ETF) এবং সোভেরিন গোল্ড বন্ডের মতো বিকল্প বিনিয়োগ ব্যবস্থাও চালু রাখা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে মোট সোনা মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭৯.৫৮ টন, যা প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫৭.৪৮ টন করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল মার্কিন ডলার এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনাও সোনা ও রুপোর দামে ঊর্ধ্বগতি বজায় রাখছে। পাশাপাশি, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এই মূল্যবান ধাতুগুলির দর শীঘ্রই কমার সম্ভাবনা আপাতত কম বলেই মনে করা হচ্ছে।
- Log in to post comments