মেসির অনুষ্ঠান ঘিরে বিশৃঙ্খলা! প্রধান উদ্যোক্তা আটক, টিকিট ফেরত দেওয়ার নির্দেশ পুলিশের

লিওনেল মেসির কলকাতা সফর ঘিরে শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে চরম অরাজকতার পর বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য পুলিশ। মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। তিনি জানান, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে এবং যাঁরা দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি দর্শকদের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়েও স্পষ্ট বার্তা দেন তিনি।

শনিবার দুপুরে মেসি যুবভারতীতে পৌঁছনোর কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি দ্রুত হাতের বাইরে চলে যায়। গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই একাংশ নেতা, মন্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এই বিশৃঙ্খলার জেরে গ্যালারি থেকে দর্শকরা মেসি তো দূরের কথা, লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো ডি’পলকেও দেখতে পাননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা জনতা ‘উই ওয়ান্ট মেসি’ স্লোগানে স্টেডিয়াম মুখরিত করে তোলে।

মাঠে মেসির উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত স্বল্প সময়ের। দুপুর ১১টা ৫২ মিনিট নাগাদ তাঁকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার পর উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। চড়া দামে টিকিট কেটেও প্রিয় ফুটবল তারকাকে এক ঝলক দেখতে না পাওয়ায় দর্শকদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছয়।

পরিস্থিতি তখন কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অভিযোগ ওঠে, মাঠের পাশে থাকা তাঁবুতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করা হয়, গোলপোস্টের জাল ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং সাজঘরের টানেলের ছাউনি ভাঙচুর করা হয়। ফেন্সিং ভেঙে প্রায় দু’ থেকে আড়াই হাজার মানুষ মাঠে ঢুকে পড়েন। পরিস্থিতি সামাল দিতে র‌্যাফ নামাতে বাধ্য হয় পুলিশ। দফায় দফায় পুলিশ ও জনতার মধ্যে ধস্তাধস্তি চলে।

স্টেডিয়ামের বাইরেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বাইপাস সংলগ্ন এলাকাতেও পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। ক্ষুব্ধ দর্শকদের একাংশ ‘চোর চোর’ স্লোগান তুলতে থাকেন এবং মেসিকে সামনে রেখে দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে।

অনেক দর্শক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাজার হাজার টাকা খরচ করে টিকিট কেটেও তাঁরা প্রিয় খেলোয়াড়কে দেখতে পাননি। তাঁদের প্রশ্ন, “আমরা কি নেতা-মন্ত্রীদের দেখতে এসেছিলাম?” অধিকাংশ দর্শকের একটাই দাবি টিকিটের সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিতে হবে।

সব মিলিয়ে, মেসির অনুষ্ঠান ঘিরে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আয়োজকদের ভূমিকা এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত দর্শকদের ন্যায্য দাবি পূরণ হবে কি না, সেদিকেই এখন তাকিয়ে সবাই।