লগ্নজিতার গান থামানো ঘিরে তীব্র বিতর্ক, শাসকদলকে আক্রমণ বিজেপির

লগ্নজিতার গান থামানো ঘিরে তীব্র বিতর্ক!

পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পী লগ্নজিতা চক্রবর্তীর গান বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে বাংলার সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ও শিল্পীদের নিরাপত্তা নিয়ে।

অভিযোগ অনুযায়ী, মঞ্চে লগ্নজিতা যখন চলচ্চিত্র দেবী চৌধুরানী-র জনপ্রিয় গান ‘জাগো মা’ পরিবেশন করছিলেন, তখনই স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মেহবুব মোল্লা ও তাঁর অনুগামীরা আপত্তি তোলেন। দাবি করা হয়, ওই গান নাকি ‘ধর্মনিরপেক্ষ নয়’। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে গান মাঝপথেই বন্ধ করতে বাধ্য হন শিল্পী।

লগ্নজিতার অভিযোগ, গান থামানোর পর মঞ্চে উঠে তাঁকে ভয় দেখানো হয় এবং শারীরিকভাবে হেনস্তার চেষ্টাও করা হয়। কয়েকজন উপস্থিত ব্যক্তি হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারত বলে দাবি শিল্পীর। এমনকি মাইক্রোফোনে তাঁর আতঙ্কিত কণ্ঠ শোনা গিয়েছিল বলেও তিনি জানিয়েছেন।

ঘটনার পর নিজেকে অপমানিত ও নিরাপত্তাহীন মনে করে অনুষ্ঠান বাতিল করে কলকাতায় ফিরে যান লগ্নজিতা ও তাঁর টিম। মঞ্চ থেকেই তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার ও শাসকদলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে বিজেপি। দলের রাজ্য নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলেছে, ঘটনার সময় ভগবানপুর থানার ভূমিকা কী ছিল। বিজেপির অভিযোগ, প্রথমে পুলিশ এফআইআর নিতে রাজি হয়নি, কেবল সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এমনকি অভিযুক্তের সঙ্গে সমঝোতার জন্য শিল্পীর ওপর চাপ দেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি করা হয়েছে।

বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পাণ্ডা বলেন, “এটা কি পশ্চিমবঙ্গ, না বাংলাদেশ বা পাকিস্তান? এখানে কি গান গাইতেও অনুমতি নিতে হবে?” তাঁর দাবি, বাংলার একাংশে ভয় ও ধর্মের রাজনীতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দলটির পক্ষ থেকে জেলা পুলিশকে ২৪ ঘণ্টা ও রাজ্য সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন ও আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে যে ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে ভগবানপুর থানার ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত মেহবুব মোল্লাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিঠুন দে।

তবুও এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, বাংলায় কি সাংস্কৃতিক মঞ্চে গান পরিবেশন করতেও রাজনৈতিক বা ধর্মীয় অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে? শিল্পীর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা কতটা সুরক্ষিত?
আর প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে?

এই প্রশ্নগুলিকে সামনে রেখে রাজ্যের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

Category